সাত বছর পর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন। দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার পর শিক্ষার্থীরা এবার সেই সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তবে শুধু আনন্দ নয়, তাদের মনে আছে নানা প্রশ্ন, প্রত্যাশা ও শঙ্কা। সংকট ও সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা। মতামত তুলে ধরেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি
সংস্কারের ধারাবাহিকতায় সময়মতো নির্বাচন জরুরি
মবিনুল ইসলাম রাশা, শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
গণতান্ত্রিক চর্চায় ভোট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটা হচ্ছে ভোটের রাজনীতি, আরেকটা হচ্ছে মেরিটোক্রেসির রাজনীতি। ছাত্রসংসদ নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় মেরিটোক্রেসির ওপর। দেশে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্রসংসদ আছে এবং দীর্ঘ সময় পর এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন পদে পদপ্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহার দিচ্ছেন। নির্বাচনী ইশতেহার মূলত একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবনারই প্রতিফলন। আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি মূলত পড়াশোনার জন্য, আর তাই একাডেমিক দিকটা হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। শিক্ষক ইভ্যালুয়েশন, ডেমো ক্লাস, মানসম্মত গবেষণাপত্র প্রকাশ- এসব বাস্তবায়নে সেরাটা দিতে হবে। গকসু যদি সময়মতো বারবার না হওয়ার চর্চা চালু হয়ে যায় তবে সংস্কারের এই পথ থমকে যাবে।
গকসু হোক জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির মঞ্চ
দ্বীপ্তি বহ্নি রানী, শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ
গকসু হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ও মতামত প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের সব সুযোগ-সুবিধা- কাক্সিক্ষত ল্যাবের সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নের/সেবামূলক কাজেই ছাত্রনেতারা নিজেদের নিয়জিত রাখবেন। ছাত্রসংসদ মূলত জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির একটি স্টেজ, যেখানে সব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখবে। অন্যান্য ক্যাম্পাসের চেয়ে আমাদের ছাত্রসংসদ ব্যতিক্রমী। এখানে দলীয় বা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ। তবে ছায়া প্রভাবক বিদ্যমান। দীর্ঘদিনের জট খুলে আবারও সংসদ নির্বাচন আশার আলো দেখছে। সে জায়গা থেকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টি হোক। আমরা চাই আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নেতৃত্ব, যারা হবে আমাদের কণ্ঠস্বর।
শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্বের প্রত্যাশা
ফাতিমা ফেরদৌস, শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদ
গকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এটি কেবল প্রতিনিধিত্ব নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নতুন পথ তৈরি করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। শিক্ষার্থীরা চান স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক গকসু, যেখানে তাদের মতামত ও অধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার ঘাটতি, লাইব্রেরি, ল্যাব, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, ওয়াশরুম ও লিফট সুবিধার উন্নয়ন, নিরাপত্তা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য, ক্যান্টিনের মানোন্নয়ন, অডিটরিয়াম, ভেটেরিনারি ফ্যাকাল্টির ল্যাব ও হাসপাতাল সরঞ্জাম বৃদ্ধি এবং ক্লাসরুমের মাল্টিমিডিয়া ও আসনবিন্যাসের উন্নয়ন।
তবে সম্ভাবনাও অনেক। শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ ও উদ্যমী। গকসু প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে পারে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন এমন নেতৃত্ব আসবে, যা বাস্তব, কার্যকর এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবর্তন আনবে।
নিয়মিত নির্বাচন না হওয়াটাই অন্যতম সংকট
শিহাব আহসান, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
একটি এমন ছাত্রসংসদ চাই, যেটা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করে, সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের কাছে দাবিদাওয়া উত্থাপন করে এবং ক্যাম্পাসে সংস্কৃতি ও ঐক্য গড়ে তোলে। চাই দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং নিয়মিত শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত ছাত্রসংসদ। গকসুর সবচেয়ে বড় সংকট হলো নির্বাচন না হওয়া বা অনিয়মিত হওয়া। নেতৃত্ব অনেক সময় দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের কারণে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ হয় না। অনেক শিক্ষার্থী গকসুর কার্যক্রম থেকে দূরে থাকেন, ফলে এটি ছাত্রদের সত্যিকারের প্রতিনিধি হতে পারে না। অথচ এটি ছাত্রদের আসল কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারে। প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি ও সমস্যাগুলো পৌঁছাতে পারে। নেতৃত্বের নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারে, যারা দায়িত্বশীল ও সচেতন। ক্যাম্পাসে ঐক্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় এবং সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। সচেতনতা বৃদ্ধি করে সামাজিক পরিবর্তন আনতে পারে। ক্যারিয়ার উন্নয়ন, সাপোর্ট ও মেন্টরিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হওয়া এবং প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত একটি ছাত্রসংসদ।

