বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বৈরথের কথা কারো অজানা নয়। এশিয়ার এ দুই ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের মধ্যে মাঠের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠার পর থেকেই দুই দেশের মাঝে তিক্ত সম্পর্কের শুরু। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে ‘নাগিন ড্যান্স’ সেটাকে চূড়ান্ত বৈরিতায় রূপ দেয়। অথচ আরেকটি এশিয়া কাপ আসতেই শত্রুতা ভুলে শ্রীলঙ্কাকে মিত্র ভাবছে বাংলাদেশ! এশিয়া কাপের চলতি আসরে ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আজ মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে দুদল। এই ম্যাচে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সমর্থক। কেবল একটি সমীকরণই বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সমর্থন দিতে।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং। তিন ম্যাচের সবকটি হেরে হংকং বাদ পড়ায় সুপার ফোরের লড়াই হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে। টেবিলে বর্তমানে সমান চার পয়েন্ট করে নিয়ে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। দুই পয়েন্ট আফগানিস্তানের। তাতে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের মধ্যকার শেষ ম্যাচে আফগানরা হারলেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শেষ চার নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। আর এ কারণেই বাংলাদেশকে আজ লঙ্কার সমর্থক হিসেবে দেখা যাবে।
বাংলাদেশের সমর্থন পেলেও সহজেই জেতা হচ্ছে না শ্রীলঙ্কার। কেননা, আফগানিস্তান আসরের ফেভারিট দল হিসেবেই খেলতে নামছে। আফগানিস্তান নিজেদের দিনে যে কোনো দলকেই অনায়াসে হারিয়ে দিতে পারে। ভারসাম্য ব্যাটিং বিভাগের সঙ্গে তাদের আছে দুর্দান্ত বোলিং লাইন। সে সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে তারা বিশ্বমানের। ইব্রাহিম জাদরান-রহমানুল্লাহ গুরবাজরা যেমন পাওয়ার হিটিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসতে পারেন, তেমনি লেগ স্পিনের জাদুতে প্রতিপক্ষকে একাই বশ করতে পারেন রশিদ খান-নূর আহমেদরা।
শ্রীলঙ্কাও ছেড়ে কথা বলবে না। আসরে টানা দুই জয় তুলে নিয়েছে চারিথ আসালঙ্কার দল। তবে দুই ম্যাচেই তাদের কঠিন পরীক্ষা দিয়ে জয় পেতে হয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ছয় উইকেটের জয়ের পর হংকংয়ের বিপক্ষে তাদের জয় চার উইকেটের বড় ব্যবধানে। হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে কিছু ভুল করেছিল শ্রীলঙ্কা। তাতে ম্যাচ হারার শঙ্কাও জেঁকে বসেছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেদিকে যেতে চান না শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক আসালঙ্কা। তিনি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে চান, ‘আমরা পেশাগত। আমরা আরো ভালো খেলতে চাই।’
এদিকে আফগান অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতা নিয়ে, ‘প্রতিটা দিনই নতুন ও চ্যালেঞ্জিং। আমাদের ক্রিকেট ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার মতো নয়। আমরা কঠিন পরিস্থিতির ভেতর থেকে এসেছি। আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি ভালোবাসি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। যদি আপনি আমাদের ক্রিকেট ইতিহাস দেখেন, আমরা যেখানে ছিলাম, এখন যেখানে আছি। পুরোপুরি আলাদা।’
এই ম্যাচে বাংলাদেশকে আশা দেখাতে পারে পরিসংখ্যান। কেননা, আফগানদের সঙ্গে সবশেষ ছয় দেখায় চার ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে সবশেষ ম্যাচে জয় হয়েছে আফগানদের। ডাম্বুলায় ম্যাচটিতে তিন রানে জিতেছে রশিদ খানের দল। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে দুদলের আট দেখায় এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ জিতে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। তিন জয় আফগানদের। যদিও ২০ ওভারের ক্রিকেটে পরিসংখ্যানে বিশ্বাস নেই। এক বলেই ঘুরে যেতে পারে ম্যাচের মোড়। তবুও বাংলাদেশ আশা দেখতেই পারে শ্রীলঙ্কার জয়ের। সে সঙ্গে নিজেদের শেষ চারে পৌঁছানোর।
টুর্নামেন্টে যাদের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ, আজ সেই তাদের পক্ষেই সমর্থক হয়ে থাকছে হচ্ছে। এই কারণে বলা হয়ে থাকে ক্রিকেট ইজ এ গুড লেভেলার!

